আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গ্রামের মেলা অনুচ্ছেদ |গ্রামের মেলা অনুচ্ছেদ Class 6, 7, 8, 9, 10 | ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গ্রামের মেলা অনুচ্ছেদ |
গ্রামের মেলা অনুচ্ছেদ
গ্রাম্য মেলা বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্য। আমাদের দেশে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে গ্রামীণ মেলার প্রচলন রয়েছে, এদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মেলার মাধ্যমে তাদের পণ্য ও উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। এ ছাড়া মেলা উপভোগ করারও সুযোগ রয়েছে। এতে থাকে সার্কাস, মিছিল, গান, নাচ, লোকনৃত্য, লটারি, ঘোড়দৌড়, লাঠি খেলা ইত্যাদি। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ এগুলো উপভোগ করে। মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়াও বিভিন্ন খেলনা ও পুতুল, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। গ্রামের মেয়েরা মেলায় আসেন বাহারি কাচের চুড়ি ও প্রসাধনী কিনতে। সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তি, অষ্টমী, গাজন, শিবরাত্রি, মহরম, ঈদ, বুদ্ধ পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি উপলক্ষে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও পীর-সন্ন্যাসীর নামে ছোট-বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নৌবিহার, রথযাত্রা, দুর্গা বা কালী পূজা, বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব। নদীর ধারে, মাঠে, রাস্তার পাশে, মন্দির বা মাজারের সামনে, বাজারে এসব মেলা বসে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে তাদের পণ্য প্রদর্শন ও মেলাকে আকর্ষণীয় করতে। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া, বন্ধুত্ব এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গল্প আদান-প্রদানের মাধ্যমে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, অনুষ্ঠান উপভোগ করা, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব মজবুত হয়। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে মানুষের মিলন মেলা নেই। এসব কারণে গ্রামের মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখা অপরিহার্য। পুরাতন লোকমেলা পুনরুজ্জীবিত করা এবং বিভিন্ন উপলক্ষে নতুন মেলার আয়োজন গ্রামীণ জীবনকে সজীব করার পাশাপাশি উপকৃত করবে। গ্রামের মেলা মানুষকে ছোট থেকে বড়, সংকীর্ণতা থেকে উদারতার চেতনায় অভিষিক্ত করে।
গ্রাম্যমেলা
মেলাটি গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয়। মেলা মানুষের সংস্কৃতির একটি বিশেষ ধমনী। এই ধমনীতে রয়েছে জীবনের স্পন্দন। এরই মধ্যে বাঙালি নিজেকে খুঁজে পেয়েছে। মেলার আক্ষরিক অর্থ হল “সভা”। মেলার নামে সবার মন এক অভূতপূর্ব আনন্দে নেচে ওঠে। মেলার আনন্দময় স্মৃতি সকলের মনে গভীরভাবে অঙ্কিত। মেলা যেন একে অপরের সাথে মিলিত হওয়ার সেতুবন্ধন। প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামের মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ উপলক্ষ্যে মেলার প্রচলন থাকলেও এখন গ্রামীণ জীবনে এটি একটি স্বাভাবিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। সাধারণত বছরের শেষে বা বছরের শুরুতে বা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় বিভিন্ন ধরনের মেলা বসে। জায়গাটিতে কিছু বিখ্যাত মেলা রয়েছে। যা ওই জায়গার নামেই পরিচিত।
মেলার জন্য সাধারণত বাজারের মতো নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। গ্রামের মাঝখানে খোলা মাঠে, মন্দির চত্বরে, নদীর ধারে বা বড় গাছের নিচে গ্রাম মেলা দেখা যায়। পূর্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী এসব স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার প্যানে অস্থায়ীভাবে দোকান বসানোর জন্য স্টল তৈরি করা হয়। মেলা শেষ হলে সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়। বছর শেষে আবারো আনন্দে মেতে ওঠে মেলার স্থান। বাংলাদেশের সাধারণ মেলাগুলোর কোনোটি একদিন, কোনোটি এক সপ্তাহ, কোনোটি পাক্ষিক আবার কোনোটি এক মাস ধরে চলে। আজকাল শুধু গ্রামে নয়, শহর ও আধা-শহরেও মেলা বসে। তবে গ্রামটি মেলার জন্য নিখুঁত পটভূমি। আমাদের দেশে সাধারণত ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামে গ্রামে মেলা বসে। পহেলা বৈশাখ, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বিজয়া দশমী, দশাই মহরম, চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরেই বেশিরভাগ মেলা বসে। তবে উপলক্ষ যাই হোক না কেন, মেলা বাঙালি সমাজ ও মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আনন্দের দিন। মেলায় সমাজের ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সব শ্রেণির মানুষ সমবেত হয়। ভেদাভেদ ভুলে সবাই আনন্দের ঢেউয়ে ভাসে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে গ্রামের মেলা শুধু আনন্দ ও মানসিক প্রশান্তি দেয় না, আর্থিক শক্তিও জোগায়। মেলায় কৃষি ও কুটির শিল্পের পণ্য বিক্রি হয়। মেলাকে ঘিরে গ্রামের কামার, তাঁতি, তাঁতীরা নানা জিনিস বিক্রি করে। তাই মেলার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষের আয়ের কোনো না কোনো পথ দেখা যায়।
মেলাকে অবলম্বন করে গ্রামীণ মানুষের আনন্দের উৎসের বন্ধ দরজা খুলে যায়। এর মধ্যে সে বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায়। মুক্তির আনন্দ খুঁজে। সত্যপীর, শীতলা, মনসা, ষষ্ঠী, ওলাবিবি, সতী-মা আরও অনেক জাগতিক দেবতা যারা গ্রামীণ জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। শত শত বছরের মানুষের আশা ও ধর্মীয় আকাঙ্খার সাথে তাদের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক। তাদের উপর ভিত্তি করে আজও চলছে বহু লোকগাথা, লোকগাথা, পাঁচালি, ছড়া, গ্রামীণ সাহিত্য ও সঙ্গীত। গ্রামীণ জীবনের শুষ্ক সেক্টরে মেলা বড় আনন্দ নিয়ে আসে। সেই জোয়ারে সিক্ত হয়েছে বাঙালির মাটি।
শেষকথা
শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম গ্রামের মেলা অনুচ্ছেদ সম্পর্কে। যদি আজকের এই বর্ষাকাল রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।