বই পড়ার অভ্যাস রচনা ক্লাস 6,7,8,9,10

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বই পড়ার অভ্যাস রচনা | অলস দুপুর রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10 টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের অলস দুপুর রচনা |

বই পড়ার অভ্যাস রচনা

বই পড়ার অভ্যাস রচনা

ভূমিকাএই মহান সৃষ্টিকে জীবনে যতটা সম্ভব জানার জন্যই মানুষ জন্মেছে। এটা জানার আরেক নাম জ্ঞান অর্জন, আর জ্ঞানই জীবনের অর্থ। মানব জীবনের সীমাবদ্ধতার স্বল্প পরিসরে অভিজ্ঞতা ও তথ্যের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা হয়। বই হল তথ্য ও অভিজ্ঞতার ভান্ডার যা মানুষ সাবধানে সঞ্চয় করে। এসব বই বা বইয়ের মাধ্যমেই মানুষ জ্ঞানের দিকে এগিয়ে যায়।

যেহেতু জ্ঞান অর্জনই জীবনের উদ্দেশ্য, তাই স্বাভাবিকভাবেই বই পড়ে একটি সার্থক আনন্দ পাওয়া যায়। বই পড়ার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত অনুভূতি, যা মানুষের কল্পনাশক্তিকে মুহূর্তের মধ্যে যেকোনো কাঙ্খিত স্তরে নিয়ে যেতে পারে। শরীরে না থাকলেও কল্পনার মেঘে ভরা কাঙ্খিত পৃথিবীতে ক্ষণিকের বিচরণ মানুষকে আনে অসীম আনন্দ। আর এখানেই বই পড়ার কদর।

আরও দেখতে পারেনগ্রীষ্মের দুপুর রচনা
 
বই পড়া কি: বই পড়ার আনন্দ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশের আগে বই পড়া বলতে ঠিক কী বোঝায় সে সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। বিশেষ করে আজকের যুগে বই পড়া জ্ঞান অর্জনের চেয়ে অনেক বেশি যান্ত্রিক ও লক্ষ্যমুখী হয়ে উঠেছে। কিন্তু বই পড়ার প্রকৃত রূপ সেরকম নয়। জ্ঞান অর্জন ব্যতীত কোন নির্দিষ্ট কাঙ্খিত লক্ষ্য ছাড়াই একটি বই পড়া শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে তথ্য জমা করে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানের বিকাশ হয় না।
এ ধরনের বই পড়ে আনন্দ নেই, বরং যা আছে তা একঘেয়েমি। বই দ্বারা আমরা সব ধরনের বই সম্পর্কে কথা বলছি। সব ধরনের বইই লেখকের কোনো না কোনো চিন্তার অনুমান। কিন্তু সেই অভিক্ষেপকে জ্ঞানের বোধের অভিপ্রায়ে অনুভব করতে হবে, কোনো বাহ্যিক লক্ষ্য অর্জনের অভিপ্রায়ে নয়। তবেই এটি একটি সার্থক পাঠে পরিণত হবে এবং এমন একটি বই পড়ার মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত আনন্দের সাগর।
 
আরও দেখতে পারেনবর্ষাকাল রচনা

 মানুষের বই পড়ার ইতিহাস: পৃথিবীর সব কিছুর মতো বই পড়ারও একটা ইতিহাস আছে। মানুষের পঠনপাঠনের ইতিহাস ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে বোঝা যায়, প্রাচীনকালে মানুষ যখন লিখতে ও পড়তে শিখেছিল, তখন পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। সে যুগে পড়ার ধরন আজকের বইয়ের মতো সুসংগত ছিল না। মানুষ পাতা, বড় পাথর, গাছের ছাল ইত্যাদিতে লেখা লিপি পাঠ করত।

বিভিন্ন বস্তুর উপর লিখিত এই ধরনের লিপির পরবর্তী সুসংগত রূপ ছিল পুঁথি। মানুষের সংগঠিতভাবে বই পড়ার অভ্যাসের শুরু এটি। তারপর থেকে কালের বিবর্তনে বই পড়ার অভ্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সর্বোপরি, পঞ্চদশ শতাব্দীতে জার্মানিতে গুটেনবার্গের ছাপাখানা আবিষ্কারের পর থেকে বই পড়ার ইতিহাস ও অভ্যাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এই সময় থেকে বই জনসাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়ে ওঠে। সবাই বই পড়ার অসীম আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পায়।

বই পড়ার উপকারিতা: বই পড়ার উপকারিতা অফুরন্ত। এটি সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র অভ্যাস যার কোনো ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বই পড়ার সময় একদিকে মানুষের চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে, অন্যদিকে মানুষের ভাষা জ্ঞানের উন্নতি ঘটে। বই পড়ার অভ্যাসের মাধ্যমে মানুষ সঠিক শব্দের সঠিক ব্যবহার শিখতে পারে।

অন্যদিকে বই পড়ার সময় মানুষের মন বাহ্যিকভাবে স্থির হয়, কিন্তু আত্মা অস্থির হয়ে ওঠে। বই পড়ে, আত্মা জ্ঞানের সন্ধানে দিক থেকে দিগন্তে, প্রান্তর থেকে প্রান্তরে চলে যায়। এছাড়া বই পড়লে মানুষের লেখার ক্ষমতা বাড়ে। তাছাড়া বই পড়ে মানুষের অন্তরে অনেক বিশেষ চরিত্রের গুণাবলি গড়ে ওঠে। সর্বোপরি, বই পড়ে একজন মানুষ যে অফুরন্ত আনন্দ পায়, তার কাছে যে কোনো জাগতিক বিনোদনের আনন্দ তুচ্ছ হয়ে যায়।

বর্তমান যুগে বই পড়া: মানব সভ্যতার ইতিহাসে বই পড়া শুরু হয়েছিল একদিকে জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে, অন্যদিকে বিনোদন বা উপভোগের উদ্দেশ্যেও। আজকের ভোগবাদী সভ্যতার যুগে, মানুষের হাতে অনেক সহজ বিকল্প রয়েছে, তাই বই পড়ার প্রতি সাধারণ মানুষের কিছুটা অনীহা রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত একশ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা যে হারে বেড়েছে, বই পড়ার চাহিদা মোটেও বাড়েনি। সে তুলনায় সহজলভ্য বিভিন্ন বিনোদনের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ।

একটি বই পড়ার জন্য যে ন্যূনতম ধৈর্যের প্রয়োজন হয় তা বিনোদনের সহজলভ্যতার কারণে গড় মানুষের মধ্যে গড়ে উঠতে পারে না। এছাড়াও বই পড়ার প্রতি মানুষের অনীহার অন্যতম কারণ বর্তমান যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার যান্ত্রিকীকরণ। আজকের শিক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান অর্জনের চেয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যভিত্তিক শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। ফলে বই পড়ার মধ্যে মানুষের আত্মার ভক্তি নেই। ফলস্বরূপ, এই ধরনের বই পড়া আনন্দের উত্সের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক একঘেয়েমির উত্স হয়ে ওঠে।

বই পড়ার নেশা: যে ব্যক্তি বই পড়ে, সময়ের বিবর্তনে বই পড়ার অভ্যাস তার নেশায় পরিণত হয়। একটি বই পড়ার প্রাথমিক গুণ হল যে একটি বই পড়ার সময়, সেই বইটি পাঠককে অন্য বই পড়তে প্ররোচিত করে। প্ররোচনার এই গোলকধাঁধায় আটকে পড়া পাঠক একটি বই শেষ করে আরেকটি শুরু করার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। যে ব্যক্তি নিয়মিত বই পড়ে, বই ছাড়া তার জীবন অচল হয়ে পড়ে। জীবনে যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন বই সব সময়ই তার ছায়াসঙ্গী।

পঠন সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র আসক্তি যার কোন ক্ষতিকর দিক নেই কিন্তু সম্ভাব্য উপকারিতা পূর্ণ। বিশ্বের প্রায় সব মানুষই যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন তারা এই আসক্তিতে আক্রান্ত। উদাহরণ হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিল গেটস, শাহরুখ খান প্রমুখের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

আমি ও বই পড়া: আমি ব্যক্তিগতভাবে আজকের প্রচলিত বই পড়ার মানসিকতা থেকে কিছুটা আলাদা। কারণ শৈশব থেকেই আমি সহজলভ্য বিনোদনের তুলনায় বইয়ের মধ্যে আশ্চর্যজনক আনন্দের সমুদ্র খুঁজে পেয়েছি। আমি বই পড়া বা গল্পের বই এর মধ্যে পার্থক্য না করে শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনের আনন্দের জন্য বই পড়তে ভালোবাসি। আমি মূলত বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন লেখকের বই পড়ি।
যদিও প্রতিটি বই বিষয় এবং চরিত্রের দিক থেকে ভিন্ন, তারা আমাকে একই আনন্দ দেয়। আমি ইতিহাস, সাহিত্য, পদার্থবিদ্যা এবং মহাকাশ বিজ্ঞানের বই পড়তে ভালোবাসি। বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, যদুনাথ সরকার; রাস্কিন বন্ড, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিংয়ের মতো কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বদের দ্বারা ইংরেজিতে লেখা বইগুলি আমার প্রিয়।
উপসংহার: বই পড়া শুধু জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়, নতুন কিছু শেখার এক অদ্ভুত আনন্দ লুকিয়ে আছে। এই আনন্দে বই পাগল পাঠকরা। বর্তমান যুগে আধুনিক প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা অনেকটাই কমেছে, তবে আজকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বইয়ের ডিজিটালাইজেশন নতুন প্রজন্মের শিশুদের আবার বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করছে বলে আশার কথা রয়েছে। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাসে এই ধারাকে পুনর্বাসিত করা গেলে তা একটি সুন্দর ও সুখী পৃথিবী গড়তে সাহায্য করবে।

 

 
আরও দেখতে পারেনঅলস দুপুর রচনা

 

 

শেষকথা

শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম বই পড়ার আনন্দ জানিয়ে বন্ধুকে পত্র। যদি আজকের এই বর্ষাকাল রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ

 

 

Check Also

রচনা: নারী শিক্ষার গুরুত্ব (১০০০ শব্দ)

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা | নারী শিক্ষার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *