আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বই পড়ার অভ্যাস রচনা | অলস দুপুর রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10 টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের অলস দুপুর রচনা |
বই পড়ার অভ্যাস রচনা
ভূমিকা: এই মহান সৃষ্টিকে জীবনে যতটা সম্ভব জানার জন্যই মানুষ জন্মেছে। এটা জানার আরেক নাম জ্ঞান অর্জন, আর জ্ঞানই জীবনের অর্থ। মানব জীবনের সীমাবদ্ধতার স্বল্প পরিসরে অভিজ্ঞতা ও তথ্যের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা হয়। বই হল তথ্য ও অভিজ্ঞতার ভান্ডার যা মানুষ সাবধানে সঞ্চয় করে। এসব বই বা বইয়ের মাধ্যমেই মানুষ জ্ঞানের দিকে এগিয়ে যায়।
মানুষের বই পড়ার ইতিহাস: পৃথিবীর সব কিছুর মতো বই পড়ারও একটা ইতিহাস আছে। মানুষের পঠনপাঠনের ইতিহাস ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে বোঝা যায়, প্রাচীনকালে মানুষ যখন লিখতে ও পড়তে শিখেছিল, তখন পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। সে যুগে পড়ার ধরন আজকের বইয়ের মতো সুসংগত ছিল না। মানুষ পাতা, বড় পাথর, গাছের ছাল ইত্যাদিতে লেখা লিপি পাঠ করত।
বিভিন্ন বস্তুর উপর লিখিত এই ধরনের লিপির পরবর্তী সুসংগত রূপ ছিল পুঁথি। মানুষের সংগঠিতভাবে বই পড়ার অভ্যাসের শুরু এটি। তারপর থেকে কালের বিবর্তনে বই পড়ার অভ্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সর্বোপরি, পঞ্চদশ শতাব্দীতে জার্মানিতে গুটেনবার্গের ছাপাখানা আবিষ্কারের পর থেকে বই পড়ার ইতিহাস ও অভ্যাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এই সময় থেকে বই জনসাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়ে ওঠে। সবাই বই পড়ার অসীম আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পায়।
বই পড়ার উপকারিতা: বই পড়ার উপকারিতা অফুরন্ত। এটি সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র অভ্যাস যার কোনো ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বই পড়ার সময় একদিকে মানুষের চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে, অন্যদিকে মানুষের ভাষা জ্ঞানের উন্নতি ঘটে। বই পড়ার অভ্যাসের মাধ্যমে মানুষ সঠিক শব্দের সঠিক ব্যবহার শিখতে পারে।
অন্যদিকে বই পড়ার সময় মানুষের মন বাহ্যিকভাবে স্থির হয়, কিন্তু আত্মা অস্থির হয়ে ওঠে। বই পড়ে, আত্মা জ্ঞানের সন্ধানে দিক থেকে দিগন্তে, প্রান্তর থেকে প্রান্তরে চলে যায়। এছাড়া বই পড়লে মানুষের লেখার ক্ষমতা বাড়ে। তাছাড়া বই পড়ে মানুষের অন্তরে অনেক বিশেষ চরিত্রের গুণাবলি গড়ে ওঠে। সর্বোপরি, বই পড়ে একজন মানুষ যে অফুরন্ত আনন্দ পায়, তার কাছে যে কোনো জাগতিক বিনোদনের আনন্দ তুচ্ছ হয়ে যায়।
বর্তমান যুগে বই পড়া: মানব সভ্যতার ইতিহাসে বই পড়া শুরু হয়েছিল একদিকে জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে, অন্যদিকে বিনোদন বা উপভোগের উদ্দেশ্যেও। আজকের ভোগবাদী সভ্যতার যুগে, মানুষের হাতে অনেক সহজ বিকল্প রয়েছে, তাই বই পড়ার প্রতি সাধারণ মানুষের কিছুটা অনীহা রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত একশ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা যে হারে বেড়েছে, বই পড়ার চাহিদা মোটেও বাড়েনি। সে তুলনায় সহজলভ্য বিভিন্ন বিনোদনের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ।
একটি বই পড়ার জন্য যে ন্যূনতম ধৈর্যের প্রয়োজন হয় তা বিনোদনের সহজলভ্যতার কারণে গড় মানুষের মধ্যে গড়ে উঠতে পারে না। এছাড়াও বই পড়ার প্রতি মানুষের অনীহার অন্যতম কারণ বর্তমান যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার যান্ত্রিকীকরণ। আজকের শিক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান অর্জনের চেয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যভিত্তিক শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। ফলে বই পড়ার মধ্যে মানুষের আত্মার ভক্তি নেই। ফলস্বরূপ, এই ধরনের বই পড়া আনন্দের উত্সের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক একঘেয়েমির উত্স হয়ে ওঠে।
বই পড়ার নেশা: যে ব্যক্তি বই পড়ে, সময়ের বিবর্তনে বই পড়ার অভ্যাস তার নেশায় পরিণত হয়। একটি বই পড়ার প্রাথমিক গুণ হল যে একটি বই পড়ার সময়, সেই বইটি পাঠককে অন্য বই পড়তে প্ররোচিত করে। প্ররোচনার এই গোলকধাঁধায় আটকে পড়া পাঠক একটি বই শেষ করে আরেকটি শুরু করার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। যে ব্যক্তি নিয়মিত বই পড়ে, বই ছাড়া তার জীবন অচল হয়ে পড়ে। জীবনে যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন বই সব সময়ই তার ছায়াসঙ্গী।
পঠন সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র আসক্তি যার কোন ক্ষতিকর দিক নেই কিন্তু সম্ভাব্য উপকারিতা পূর্ণ। বিশ্বের প্রায় সব মানুষই যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন তারা এই আসক্তিতে আক্রান্ত। উদাহরণ হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিল গেটস, শাহরুখ খান প্রমুখের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
শেষকথা
শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম বই পড়ার আনন্দ জানিয়ে বন্ধুকে পত্র। যদি আজকের এই বর্ষাকাল রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।