স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব রচনা | স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10। ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব রচনা |

স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব রচনা

ভূমিকা:

বই মানুষের চিরন্তন বিশ্বস্ত সঙ্গী। জন্মগতভাবেই মানুষ অন্যের সাহচর্য প্রত্যাশা করে। তাই প্রাগৈতিহাসিক যুগ
থেকেই মানুষ পারস্পরিক সহযােগিতায় জীবনের অর্থ খুঁজেছে। মানুষের পাশাপাশি একসময় এ সাহচর্যের অংশীদার হয়েছে বই । মানবজীবন প্রবাহের যাবতীয় ভাব-অনুভূতি জানার প্রবল আগ্রহ মানুষকে বইমুখী করেছে। কেননা যুগ যুগ ধরে মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার অনুভূতি বুকে ধারণ করে অনাগত কালের মানুষের জন্যে চির অপেক্ষমাণ হয়ে আছে বই । অতীত-বর্তমান আর ভবিষ্যতের যােগসূত্র রচনা করে বই । তাই বই পড়ে মানবমন লাভ করে অনাবিল প্রশান্তি।

বইয়ের বিকাশ:

বই মূলত জ্ঞানীর জ্ঞানসাধনার ফসল । জ্ঞানসাধক তার অভিজ্ঞতালব্ধ ভাব-অনুভূতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে
জানানাের তাগিদ থেকে বই লেখেন। সভ্যতার বিকাশের একপর্যায়ে মানুষ তার চিন্তাভাবনা, হৃদয়ানুভূতি, অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ভবিষ্যতের মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার জন্যে গ্রন্থ রচনার আশ্রয় নিল । ক্ৰমে ছাপাখানার আবিষ্কার বইয়ের প্রচারকে বিস্তৃত করল । ফলে ঘরে বসেই মানুষ যাবতীয় বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা শুরু করল। শুধু অতীতের ঘটনাবলি নয়, বর্তমানের বিশ্বব্যাপী জ্ঞান আহরণের দ্বার উন্মুক্ত হলাে। এ যেন ক্ষুদ্র আসনে বসে বিশ্বমানবের সাহচর্য লাভ করা। জ্ঞানের মহাসমুদ্রের কল্লোল শােনা যায় বইয়ের পাতায়। যে মহাসমুদ্র যুগ থেকে যুগান্তরে জ্ঞান বিতরণের মহান ব্রত নিয়ে সদা প্রবহমান ।

বই পড়ার প্রয়ােজনীয়তা:

বই বিপুল জ্ঞানের ভাণ্ডার, প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সাধনার ফল বিধৃত আছে বইয়ে। নানান কালের মানুষ
তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানােপলদ্ধি অনাগত কালের মানুষের আনন্দ জোগানাের জন্যে লিপিবদ্ধ করে যান বইয়ে। ফলে বর্তমানের মানুষ নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্য বইয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করে। স্বল্পায়ু জীবনে মানুষে পক্ষে বিস্তৃত পৃথিবীর বহুবিধ জ্ঞানলাভ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বইই পারে তার জ্ঞানভাণ্ডারকে পরিপূর্ণ করতে। এ উপলব্ধি থেকেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর ঐকতান ‘ কবিতায় বলেছেন –

বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি !
বিশাল বিশ্বের আয়ােজন ;
মন মাের জুড়ে থাকে অতিক্ষুদ্র তারি এক কোণ
সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে–’

বিশ্বের মহামূল্য গ্রন্থগুলাে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য সাধনার নির্বাক সাক্ষী, এগুলাের মধ্য দিয়েই মানুষ লাভ করেছে তার আপন অন্তরতম সত্তার পরিচয়। বই হলাে মানুষের সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন, তাই যুগে যুগে বই মানুষের জ্ঞানের ভাণ্ডার পরিপূর্ণ করেছে।

বই মানুষের বিশ্বস্ত সঙ্গী:

মানুষের নিঃসঙ্গতা ঘুচানাের অনুপম সঙ্গী বই। মানবজীবন নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। এ সংঘাতময় জীবনে বই পারে সকল ক্লান্তি মুছে দিয়ে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে। মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে কাজ করে বই। জীবনের নানাবিধ অভিঘাতে মানুষ যখন অস্থির হয়ে ওঠে তখন গ্রন্থ পাঠেই মেলে সান্ত্বনা। বাইরের যান্ত্রিকতায় আমরা যখন মনের গহীনে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি তখন গ্রন্থ পাঠেই পাওয়া যায় পরম বন্ধুর সাক্ষাৎ | বইয়ের সঙ্গের উপযােগিতা সম্বন্ধে চার্লস ল্যাম্ব বলেছেন, ‘বই পড়তে যে ভালােবাসে তার শত্রু কম। বই মানুষের আত্মাকে সৌন্দর্য। দান করে। আর আত্মার সৌন্দর্য মানুষকে দান করে পরিপূর্ণতা । গ্রন্থ পাঠেই খুঁজে পাওয়া যায় সামনে চলার আলাের পথ, আত্মার পরিশুদ্ধি ! তাই বইয়ের চেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু অকল্পনীয়।

বই পড়া এবং আনন্দলাভ:

উৎকৃষ্ট বই মানব হৃদয়ের অনাবিল আনন্দের অফুরন্ত উৎস। কর্মব্যস্ত মানুষ হাজার ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় করে নিয়ে বইয়ের মাধ্যমে পেতে চায় অনাবিল আনন্দ। জাগতিক জীবনের নানাবিধ সংঘাত এবং সমস্যার উর্ধ্বে বই মানুষকে আনন্দ দান করে । জীবন সংগ্রামের যান্ত্রিকতা থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের ভেতর সৃষ্টি করে একান্ত নিজস্ব একটি ভুবন। সে ভুবনে সবচেয়ে বেশি সাহচর্য দান করে গ্রন্থ পাঠ, মানুষকে দেয় নতুন প্রেরণা, উৎসাহ ও মানসিক প্রশান্তি। সত্য, সুন্দর এবং জ্ঞানের আলােয় গ্রন্থ পাঠ মনের বিকাশ ঘটায়। সকল অকল্যাণ, অসত্য, সংকীর্ণতা থেকে মানবমনকে মুক্তি দেয় বই । এজন্যই ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন, ‘When we buy a book we buy pleasure.’ বইয়ের মাধ্যমেই আমরা বিশ্বের সকল দেশের সকল জাতির এবং সকল প্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হবার আনন্দ লাভ করি। হেনরি ভনডিকের মতে, হৃদয়ের স্পর্শ যেখানে আছে, সেটাই গ্রন্থ। আমরা এক যুগে বসে আরেক যুগের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের হৃদয়ানুভূতির সাথে মিলিত হবার সৌভাগ্য অর্জন করি গ্রন্থ পাঠে, এভাবেই দুঃখ-বেদনার মুহূর্তে, মানসিক অশান্তিতে, হতাশাগ্রস্ত মনে বই নানাভাবে আমাদের আনন্দের সঞ্চার করে।

সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে বই:

বই শুধু ব্যক্তিমনের নিঃসঙ্গতা দূর করে না, সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশেও রাখে। অসাধারণ ভূমিকা। গ্রন্থের সাহচর্যেই মানুষ অগ্রসর হয়ে চলে সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রম অগ্রযাত্রার পথে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্যে সেতুবন্ধ রচিত হয়েছে উৎকৃষ্ট বইগুলাের মাধ্যমে। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত সভ্যতা-সংস্কৃতি যে ধারায় বিকশিত হয়েছে এবং হচ্ছে তা অক্ষরের ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়েছে গ্রন্থে, যা পাঠ করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পুরাতন ও নতুনের তুলনা করে পাবে সৃজনের উন্মাদনা। এ সৃজনশীল অনুপ্রেরণাই সভ্যতা বিকাশের মূল নিয়ামক। যুগে যুগে যে সকল মনীষী সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে অবদান রেখেছেন তাদের সাথে আমরা পরিচিত হতে পারি গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে । হােমার, দান্তে, ভার্জিল, মাদাম কুরি, জগদীশচন্দ্র বসু, প্লেটো, এরিস্টটল কিংবা মার্কসকে আজ আমরা পাব, কিন্তু তাদের লেখা বইয়ের মাধ্যমেই আমরা তাদের সান্নিধ্য লাভ করব এবং তাদের কর্মপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে সভ্যতা
সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার মানসিক জোর পাব। সরােজ আচার্যের ভাষায়-

জীবনটা বই দিয়ে ঘেরা নয় ঠিকই, তবে জীবনকে বুঝতে হলে, অভ্যাসের সংস্কারের বেড়া ভাঙতে হলে
বই চাই।’
এভাবেউ সংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে বই সভ্যতার বিকাশ ঘটায় যুগের পর যুগ।

ব্যক্তিত্ব বিকাশে বই:

বই মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ফলে মনের দিগন্ত হয় উন্মােচিত ও প্রসারিত। কবি শেলীর মতে, ‘যতই আমরা অধ্যয়ন করি, ততই আমাদের অজ্ঞতাকে আবিষ্কার করি।’ যতই মানুষ তার নিজের অজ্ঞতাকে চিহ্নিত করতে পারে ততই তার মন মহৎ সাধনায় ব্যাপ্ত হতে শেখে। উৎকৃষ্ট বই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনকে শুদ্ধ করে, মানুষ খুঁজে পায় যথার্থ মানুষ হয়ে ওঠার পথের সন্ধান। বই হলাে মানুষের সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন। তাই গ্রন্থ পাঠে আমরা বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচিত হয়ে নিজ ব্যক্তিত্বের বিকাশের পথ খুঁজে পাই । আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটিয়ে পরিপূর্ণতা অর্জনের অনুপ্রেরণা জোগায় বই । বিদ্যাসাগর, রাজা রামমােহন রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দস্তয়ভস্কি, মাক্সিম গাের্কি প্রমুখ মনীষীর মহৎ চিন্তাচেতনা, মহৎ কর্মকাণ্ডের সাথে আমরা পরিচিত হতে পারি গ্রন্থ পাঠে। গ্রন্থ পাঠে মনের জানালা খুলে যায়, উঁকি দেয় মুক্তচিন্তা, গড়ে ওঠে মূল্যবােধ।

বই নির্বাচনে সতর্কতা:

যুগ যুগ ধরে মানুষ জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তার সবই বিধৃত হয়েছে
বইয়ের পাতায় । ফলে মানুষ প্রয়ােজনীয় দিকনির্দেশনা পেতে পারে বইয়ের সাহায্যে। উৎকৃষ্ট বই মানুষের আত্মার পরিশােধন করে তাকে আনন্দ ও প্রকৃত সুখ দান করে। অন্যদিকে, সাহিত্যিক মানসিকতা নিয়ে নয় বরং ব্যবসায়ী মানসিকতা নিয়ে কিছু বই ছাপা হয়, যা মানুষকে ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যায়। এসব বই মনকে পরিশুদ্ধ না করে বিষাক্ত করে। যা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবন উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। তাই গ্রন্থ পাঠের ক্ষেত্রে গ্রন্থ নির্বাচনে দিতে হবে সতর্ক দৃষ্টি। মনের বিকাশে যে বই সহায়ক তাকেই পাঠের জন্যে নির্বাচিত করতে হবে।

উপসংহার:

বিখ্যাত ঔপন্যাসিক তলস্তয় বলেছেন, জীবনে তিনটি বস্তুই বিশেষভাবে প্রয়ােজন, তা হচ্ছে ‘বই, বই এবং বই।
বই মানুষের আনন্দের সঙ্গী । মানুষের মনকে জাগিয়ে তােলে বই। বইয়ের মাধ্যমে মানুষ যতবার তার অজ্ঞতাকে আবিষ্কার করে ততবার একটি করে মনের চোখ ফুটে ওঠে। গ্রন্থ পাঠে আনন্দলাভ এবং আনন্দোপলব্ধির জন্যে মানুষকে হতে হবে অধ্যবসায়ী। ভালােবাসতে হবে বইকে। অন্যথায়, গ্রন্থের জগৎ থেকে আনন্দ আহরণে সে হবে ব্যর্থ।

শেষকথা

শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব রচনা। যদি আজকের এই খাদ্য মেলা রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

Check Also

রচনা: নারী শিক্ষার গুরুত্ব (১০০০ শব্দ)

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা | নারী শিক্ষার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *